মোজাম্মেল হক, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভাওড়া ইউনিয়রে এক গ্রাম্য পুলিশের ধর্ষনে কামারপাড়া এলাকার আফসানা(২০) নামে এক নারী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপার শুরু হয়েছে। অসহায় পরিবারবর্গ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছে ঐ নারী। ধর্ষক টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের পাইখার ভাওড়া এলাকার মৃত ওয়জেদ মিয়ার ছেলে মো. আব্বাস মিয়া (৪৯)। তিনি ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য পুলিশ হিসেবে কর্মরত আছে। এলাকায় কোন বিচার না পেয়ে মেয়ের বড় ভাই মো. শফিকূল ইসলাম বাদী হয়ে ২৭/৯/২০২৩ইং তারিখে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বর্তমানে ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদে যেতে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগিতেছে ভাওড়া ইউনিয়ন এলাকাবাসীর মা ও বোনেরা।
অভিযোগের বিবরনে, অন্তঃসত্বা নারী আফসানা প্রায় ৭/৮ মাস পূর্বে তার বড় বোন নূরুন্নাহারের স্বামীর বাড়ি বেড়াতে যায়। বোনের স্বামীর বাড়িতে অবস্থানকালে বসত বাড়ির পশ্চিম ভিটির বসত ঘর ঝাড়– দিতেছিল বাড়িতে কোন লোকজন না থাকার সুযেগে গ্রাম্য পুলিশ লম্পট মো. আব্বাস মিয়া আফসানে তার ইচ্ছার বিরোদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন করে এবং বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য প্রান নাসসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। ঘটনার পরদিন তার নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। নারী বাড়ি ফেরার ১০/১২ দিন পর ধষর্নকারী আব্বাস নারীর নিজ বাড়িতে আসিয়া বিভিন্ন প্রকার ভয় দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে বাদ্য করে। প্রান নাসের ভয়ে মেয়েটি লম্পট আব্বাসের কথানুযায়ী ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে আব্বাস তাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পাশে একাট রুমে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরোদ্ধে আবারও জোরপূর্বক তাকে ধর্ষন করে। বিষয়টি না বলার জন্য আবারও তাকে হুমকি দেয়। গত ১৫/৯/২০২৩ ইং তারিখে এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে আফসানার ভাই,বোন, মা আফসানাকে মির্জাপুর সেন্ট্রাল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক (প্রাঃ) হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে আফসানা সাত মাসের অন্তঃসত্বা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিষয়টি এলাকার গন্যমান্য মাতাব্বরদের জানালে ২৫/৯/২৩ ইং তারিখে মিমাংসার লক্ষে কামারপাড়া বাজারের বুলবুলের বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলায় সালিশ বসিলে আব্বাস তাদেরকে এক তরফা ক্ষমতা বলে সালিশ থেকে আফসানা ও তার পরিবারের সবাইকে বিভিন্ন প্রকার প্রান নাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন অভিযোগের তদন্তকারী অফিসার এস আই মো. মাহফুজ।
আজ ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও ধর্ষনের স্বীকার নারীর এলাকা কামারপাড়া গিয়ে ঘটনার সত্যতা মিলল এবং অন্তঃসত্বা নারী আফসানা বলেন, আমি ৭/৮ মাস পূর্বে আমার বড় বোন নূরুন্নাহারের স্বামীর বাড়ি বেড়াতে যাই। বোনের স্বামীর বাড়িতে অবস্থানকালে বসত বাড়ির পশ্চিম ভিটির বসত ঘর ঝাড়– দিতেছিলাম। বাড়িতে কোন লোকজন না থাকার সুযেগে আব্বাস তালই আমাকে মুখ চেপে ধরে আমার ইচ্ছার বিরোদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন করে এবংকথাটি না বলার জন্য আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তাই আমি প্রানের রক্ষার ভয়ে বিষয়টি কাউকে না বলিয়া ঘটনার পরদিন আমার নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। আমি বাড়ি ফেরার ১০/১২ দিন পর আব্বাস আমার নিজ বাড়িতে আসিয়া বিভিন্ন প্রকার ভয় দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে বাদ্য করে। সম¥ান ও প্রাণনাশের ভয়ে আমি আব্বাসের কথানুযায়ী ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে আব্বাস আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পাশে একাট রুমে নিয়ে আমার ইচ্ছার বিরোদ্ধে আবারও জোরপূর্বক ধর্ষন করে। বিষয়টি না বলার জন্য আবারও তাকে হুমকি দেয়।আমি সাত মাসের অন্তঃসত্বা। আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী আব্বাস। আমি আইন বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের নিকট আব্বাসের সুষ্ঠ বিচার চাই।
সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক বিপ্লব, এমারত সিকদার, সাথি আক্তার, শফিক, আরিফুল সিকদার, ভাওড়া ৩নং ওয়ার্ডের লিটন মেম্বারসহ সকল পুরুষ ওমহিলা মেম্বারগন ও আরও এলাকাবাসীরা বলেন, আফসানা সাত মাসের অন্তসঃসত্বা। ইউনিয়ন পরিষদ একটি পবিত্র জায়গা। এই পবিত্র জায়গায় লম্পট আব্বাস চৌাকদার এই অনৈতিক কাজ করে আফসানাকে জোর পূর্বক ধর্ষন করে পরিষদ. এলাকার মান সম্মান নষ্ট করেছে, আতঙ্ক করেছে ভাওড়া ইউনিয়ন বাসীকে ও করেছে একটি পরিবারকে কলঙ্কিত। পরিষদে মহিলাদের মধ্যে এই অনৈতিক কাজ কেউ যাতে ভবিষ্যতে না করতে পারে এজন্য আইন বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের নিকট সুষ্ঠ বিচারের জন্য জোর দাবী জানিয়েছে ভাওড়া ইউনিয়ন এলাকাবাসী।
ধর্ষিতার বড় বোন নূরন্নহার বলেন, আমার বাবা নেই, প্রায় দের বছর পূর্বে আমা ছোট বোন আফসানাকে ইসলামীক শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে দেই। বিয়ের ৬মাস পরে আফসানার স্বামী সৌদি আরব চলে যায়। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর থেকে আমার বোন আমার মায়ের নিকট থাকে। গত প্রায় ৭/৮ মাস পূর্বে বোন নূরুন্নাহার আমার বাড়িতে বেড়াতে আসে। আমরাবাড়িতে না থাকার সুযোগে আমার চাচা শশুর আমার বোনের সাথে জোরপূর্বক খারাপ কাজ করে। তারপরদিন সে আমার বাবার বাড়ি চলে যায়। তার পর থেকে আমাদের অজান্তে তাকে বিভিন্ন প্রকার ভয় দেখিয়ে ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষন করে। হঠাৎ আমার বোন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ডাক্তার দেখাই। ডাক্তার বলেন সে সাত মাসের গর্ভবতী।
ধর্ষিতার মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমি একজন অসহায় নিরীহ মহিলা। আব্বাসের অনৈতিক কাজের জন্য আফসানা সাত মাসের অন্তঃসতা। আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। আমি আব্বাস চৌকিদারের সুষ্ট বিচার চাই।
ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে চৌকিদার আব্বাসের অনৈতিক কাজের জন্য আফসানা সাত মাসের অন্তঃসত্বা বিষয়টির সত্যতা জানার জন্য পরিষদে আসার জন্য আব্বাসকে খবর পাঠাই কিন্তু সে আসেনি।
অভিযুক্ত গ্রাম্য পুলিশ আব্বাস মিয়া বলেন,ভূল করেছি। আমি বিয়ে করব। এ বিষয়ে কামারপাড়া অফিসে বসা হয়েছিল। মেয়েকে অন্য জাগায় বিয়ে ও অন্যান্য খরচ বাবাদ সিরাজ, বেনু সহ আরও কয়েকজন মাতাব্বর আমার নিকট ৭ লক্ষ টাকা দাবী করে। এ কারনে কোন মিমাংসা হয়নি।
কামারপারার সিরাজ বলেন, বিচারে বসা হয়েছিল। বিচারের মধ্যে কোন টাকা পয়সা চাওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। এস আই মাহফুজকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিলম্বে মামলা রেকর্ড করে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহন করা হবে।